ARISE ! AWAKE ! AND STOP NOT TILL THE GOAL IS REACHED .
বনগ্রাম শ্রীরামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ সংঘ
আমাদের ওয়েব সাইটে আসার জন্য ধন্যবাদ । আমাদের সংগঠন আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে ।

স্বামীজির বাণী ও রচনা


রাজযোগ 

প্রস্তাবনা

রাজযোগও পৃথিবীতে প্রচলিত অন্যান্য বিজ্ঞানের মতো একটি বিজ্ঞান। এই বিজ্ঞান মনের বিশ্লেষণ; অতীন্দ্রিয় জগতের তথ্যসংগ্রহ দ্বারাই এতে আধ্যাত্মিক রাজ্য গড়ে তোলা হয়। সকল দেশের মহান্ আচার্যেরাই ব'লে গেছেন, ‘দেখেছি ও জানি’। যীশু, পল ও পিটার সকলেই বলেন, তাঁদের প্রচারিত সত্য তাঁরা প্রত্যক্ষ করেছেন।

এই প্রত্যক্ষানুভূতি যোগ-লব্ধ।

স্মৃতি বা চেতনা সত্তার সীমা হ’তে পারে না; কেননা আর একটা অতীন্দ্রিয় অবস্থা আছে; সেখানে এবং অচেতন অবস্থায় কোন ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি নেই, কিন্তু এই দুটির মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত, যেমন-জ্ঞান আর অজ্ঞান। যে যোগশাস্ত্র নিয়ে আমরা আলোচনা করছি, সেটা ঠিক বিজ্ঞানের মতোই যুক্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।

মনের একাগ্রতাই হচ্ছে সমস্ত জ্ঞানের উৎস।

যোগ আমাদের শিক্ষা দেয়-কিভাবে জড়কে অধীন ক’রে রাখা যায়; জড় চিরদিন চেতনের অধীনই থাকবে।

‘যোগ’ মানে (Yoke) জুড়ে দেওয়া; অর্থাৎ জীবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলন ক’রে দেওয়া।

মন চেতন-ভূমিতে ও তার নিম্নস্তরে কাজ করে। আমরা যাকে চেতনা বলি, সেটা আমাদের প্রকৃতির অনন্ত শৃঙ্খলের একটা শিকলি-মাত্র।

একটুখানি চেতনা নিয়ে আমাদের এই ‘আমি’, আর তার চারদিকে বিরাট অচেতন সত্তা; এই ‘আমি’র ওপারে আমাদের অজ্ঞাত অতীন্দ্রিয় ভূমি।

নিয়মিতভাবে ঠিক ঠিক যোগ অভ্যাস করলে মনের স্তর একটার পর একটা উন্মুক্ত হয়, আর প্রত্যেক স্তরে আমাদের সামনে নতুন নতুন তথ্য প্রকাশিত হয়। আমরা দেখি, যেন আমাদের সামনে নতুন জগতের সৃষ্টি হচ্ছে, আমাদের হাতে যেন নতুন নতুন শক্তি এসে পড়ছে; কিন্তু মাঝ-রাস্তায় আমরা যেন থেমে না যাই! হীরের খনি সামনে পড়ে রয়েছে, কাঁচের পুঁতি যেন আমাদের চোখে ধাঁধাঁ লাগিয়ে না দেয়।

ভগবানই আমাদের লক্ষ্য, তাঁর কাছে যেতে না পারলে আমাদের বিনাশ।

যাঁরা সাধক-সিদ্ধি লাভ করতে চান, তাঁদের তিনটি জিনিস দরকার।

প্রথমঃ ইহলোকের ও পরলোকের সব ভোগ-বাসনা ছাড়তে হবে; চাইতে হবে শুধু ভগবান্ আর সত্য।

 

দ্বিতীয়ঃ সত্য আর ভগবানকে লাভ করবার জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা চাই। যে-মানুষ জলে ডুবছে, সে যেমন বাতাসের জন্য ব্যাকুল হয়, ঠিক তেমনি ব্যাকুল হও; সত্য ও ভগবানের জন্য ঐরকম অধীর হও।তৃতীয়ঃ ছ-টি শিক্ষা। ১ম-মনকে বহির্মুখ হ’তে না দেওয়া। ২য়-মনকে অন্তর্মুখ ক’রে একটা ভাবে আবদ্ধ রাখা। ৩য়-প্রতিবাদ না ক’রে সব জিনিস সহ্য করা। ৪র্থ-শুধু ঈশ্বরকে চাও, আর কিছুই নয়। আপাত-মনোরম বিষয় আর যেন তোমাকে ঠকাতে না পারে। সব ত্যাগ ক’রে শুধু ভগবানকেই চাও। ৫ম-উপস্থিত কোন একটা বিষয় নাও, তার শেষ পর্যন্ত বিচার কর, সমাধান না ক’রে ছেড়ো না। সময়ের হিসাব ক’রো না। আমাদের জীবন সত্যকে জানবার জন্য, ইন্দ্রিয়তৃপ্তির জন্য নয়; ইন্দ্রিয়তৃপ্তি পশুরা করুক, আমরা কখনও তাদের মতো ভোগ করতে পারি না। মানুষ মননশীল; মৃত্যুকে সে যতদিন না জয় করে, যতদিন না আলোকের সন্ধান পায়, ততদিন সে সংগ্রাম করবেই। নিষ্ফল বৃথা কথাবার্তায় সে নিজের শক্তিক্ষয় করবে না। সামাজিকতা ও লোকমতের পূজাই হচ্ছে পৌত্তলিকতা। আত্মা-লিঙ্গহীন, জাতিহীন, দেশহীন ও কালহীন। ৬ষ্ঠ-সর্বদা নিজের স্বরূপ চিন্তা কর। কুসংস্কারের পারে যাও। ক্রমাগত ‘আমি ছোট, আমি ছোট’-এই ভেবে নিজেকে ছোট ক’রে ফেলো না; যতদিন না ব্রহ্মের সঙ্গে অভেদজ্ঞান(অপরোক্ষানুভূতি) হচ্ছে, ততদিন দিনরাত্র নিজেকে বলো-তোমার স্বরূপের কথা।

এই সব কঠোর সাধননিষ্ঠা ব্যতীত কোন ফল-লাভ সম্ভব নয়।

নিরপেক্ষ পরব্রহ্ম উপলব্ধি করতে পারি, কিন্তু আমরা কখনও তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারি না; যে মুহূর্তে প্রকাশ করতে যাই, তখনি তাঁকে সীমাবদ্ধ ক’রে ফেলি; ফলে অনন্ত হয়ে পড়েন সান্ত।

ইন্দ্রিয়ের সীমা ছাড়িয়ে যেতে হবে, বুদ্ধিকেও অতিক্রম করতে হবে; আর এ শক্তি আমাদের কাছে।

প্রাণায়ামের প্রথম সাধন এক সপ্তাহ অভ্যাস ক’রে শিষ্য গুরূকে জানাবে।

প্রত্যেকটি ব্যক্তিত্ব বিকশিত করতে হবে। সকলেই এক কেন্দ্রে গিয়া মিলিত হবে।

‘কল্পনাই প্রেরণার উৎস ও চিন্তার ভিত্তি।’

প্রকৃতির ব্যাখ্যা আমাদের ভেতরেই রয়েছে; পাথর পড়ে-এটা বাইরের ঘটনা, কিন্তু ‘মাধ্যাকর্ষণ’-আবিষ্কারের শক্তি আমাদের ভেতরেই ছিল, বাইরে নয়।

 

যে বেশী খায় বা যে অনাহারী, যে বেশী ঘুমোয় বা যে খুব কম ঘুমোয়, সে যোগী হ’তে পারে না।

অজ্ঞান, চঞ্চলতা, ঈর্ষা, আলস্য ও তীব্র আসক্তি-এই ক-টি যোগাভ্যাসের পরম শত্রু। যোগীর পক্ষে এই তিনটি বিশেষ প্রয়োজনীয়ঃ

প্রথম-দেহ ও মনের পবিত্রতা। সব রকমের মলিনতা, যা মনকে নীচে নামিয়ে দেয়, যোগী তা পরিত্যাগ করবে।

দ্বিতীয়-ধৈর্য। প্রথম প্রথম অনেক আশ্চর্য দর্শনাদি হবে, তারপর সে-সব বন্ধ হয়ে যাবে। এটিই হচ্ছে সব চেয়ে কঠিন সময়, কিন্তু ধরে থাকা চাই; ধৈর্য থাকলে শেষে সত্য লাভ হবেই।

তৃতীয়-অধ্যবসায়। সম্পদে বিপদে, স্বাস্থ্যে রোগে-সব সময় যোগ অভ্যাস ক’রে যাও, একটি দিনও বাদ দিও না।

যোগ-সাধনের সবচেয়ে প্রশস্ত সময় হচ্ছে দিন ও রাত্রির সন্ধিক্ষণ-সে-সময় দেহ ও মন খুব শান্ত থাকে, চঞ্চলতা ও অবসাদ কিছুরই তখন প্রাবল্য থাকে না। যদি সে-সময় না পারো, তা হ’লে ঘুম থেকে উঠে এবং শুতে যাবার আগে সাধন অভ্যাস করবে। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা খুব পরিপাটিভাবে প্রয়োজন(প্রত্যহ স্নান করবে)।

স্নানের পর বেশ দৃঢ়ভাবে আসনে বসবে, মনে করবে তুমি যেন পাহাড়ের মতো অটল, কোন কিছুই তোমাকে নড়াতে পারবে না। মেরুদন্ডের উপর জোর না দিয়ে কোমর, ঘাড় ও মাথা ঋজুভাবে রাখবে। মেরুদন্ডের ভেতর দিয়েই সব ক্রিয়া হয়, কাজেই সেটিকে দুর্বল করা চলবে না।

পায়ের আঙুল থেকে আরম্ভ ক’রে ধীরে ধীরে শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ স্থির করবে। এই স্থির ভাবটি মনে মনে চিন্তা কর, দরকার মনে হয় তো প্রতি অঙ্গ স্পর্শ করবে।

মাথায় না পৌঁছনো পর্যন্ত ধীরে ধীরে নীচের দিক থেকে শরীরের প্রতি অঙ্গ স্থির করতে করতে ওপরের দিকে আসবে, যেন একটি অঙ্গও বাদ না যায়। তারপর সমস্ত দেহটি স্থির ক’রে রাখবে।

আমাদের ই-মেইল আই ডি ramakrishnavivekanandasangha@gmail.com আমাদের দূরভাষ নম্বর 09733549189 এবং 9474460431 আমাদের ফেসবুক প্রোফাইল www.facebook.com/vivekananda.swami.54 This website was created for free with Own-Free-Website.com. Would you also like to have your own website?
Sign up for free